লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : মসজিদ কমিটির সভাপতির পদ ভাগিয়ে নিতে মুখিয়ে ছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালী মো. সিরাজ উল্যাহ মনির। পরিকল্পনামাফিক আশপাশের এলাকা থেকে লোকজনও এনে মসজিদে জড়ো করেছিলেন নির্দিষ্ট দিনে। কিন্তু এলাকাবাসী ও মুসল্লিদের প্রতিবাদের মুখে তার সে খায়েস পূরণ হয়নি। ক্ষুদ্ধ হয়ে তিনি নিজের ছেলেকে ভিকটিম সাজিয়ে থানায় মামলা করেন প্রতিবেশী এক স্কুল শিক্ষক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। .
.
ঘটনাটি ঘটেছে গেলো শুক্রবার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড পূর্ব নন্দনপুর গ্রামে।.
.
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পূর্ব নন্দনপুর হারিছ মিয়া মুন্সিবাড়ি সংলগ্ন বাইতুন নূর জামে মসজিদের সভাপতি পদ দখল করার জন্য দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মৃত শফিকুল্লাহর ছেলে, রায়পুর রুস্তমআলী কলেজের ইংরেজি শিক্ষক মো. সিরাজ উল্যাহ মনির। এজন্য তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ওয়ার্ড নেতা মাহমুদুর রহমান আদর ও তার ভাই রাসেলকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মসজিদ কমিটির সভাপতি পদে সিরাজ উল্যার নাম ঘোষণা করলেই বাঁধে বিপত্তি। মসজিদে হট্টগোল শুরু হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয়দের সাথে হাতাহাতি লাগে বহিরাগতদের। ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে মসজিদের ভেতর থেকে বাহিরেও। জনরসের মুখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় সন্ত্রাসীরা। ব্যর্থ হয় সিরাজের মিশন। ক্ষুদ্ধ হয়ে তিনি, সাইকেল চালাতে গিয়ে চোট লাগা, নিজ শিশুপুত্র মোহাম্মদ সানজিদুল ইসলাম সাইফান (০৯) কে ভিকটিম সাজিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেন। শিশু নির্যাতনের অভিযোগে, লক্ষ্মীপুরের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের এক শিক্ষক খালেদ মোহাম্মদ আলী তানভীর ও তার পরিবারের দুই সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দেন। যার সদর থানার মামলা নং জিআর-৪৯৮/২৪খ্রি:। বর্তমানে ওই শিক্ষক মিথ্যা মামলার অপবাদ গাঁড়ে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বইছে। .
.
এবিষয়ে জানতে চাইলে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম(৭৫) জানান, যে মামলা দিয়েছে আর যাকে ফাঁসানো হয়েছে দুজনই আমার ছাত্র এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। মূলত মসজিদ কমিটি নিয়ে এই ঘটনা। .
.
মোহাম্মদ বেলাল হোসেন (৬৬) জানান, নতুন কমিটি নিয়ে মসজিদে হট্টগোল হয়েছে। যেখানে ঝামেলা দেখে বড়'রা সরে গেছে, সেখানে মনিরের ছেলে আসবে কই থেকে। এটা একশো পার্সেন্ট সাজানো ঘটনা। .
.
রুবেল হোসেন (২৮) জানান, মনির প্রফেসরকে মসজিদ কমিটির সভাপতি করা নিয়ে বহিরাগতরা এসে মসজিদে ঝামেলা করেছে। ঝামেলা শুরু হওয়ার আগেই তানভীরকে আমার বাবা সাথে নিয়ে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়। এখন শুনি তানভীর মনির প্রফেসরের ছেলেকে মারছে। এলাকার কোন মানুষ এমন ঘটনা দেখেনি। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন এটা সম্পূর্ণ সাজানো ঘটনা। .
.
ভিকটিমের খেলার সাথী শিশু আফিফ আরাফ হিসাম(০৮) বলেন, সাইকেল চালাতে গিয়ে গুতা লেগে সাফওয়ানের ঠোট ফেঁটেছে। ওকে কেউ মারেনি। সাফওয়ান আমার চাচাতো ভাই।.
.
অভিযোগ রয়েছে, কথিত প্রফেসর মোঃ সিরাজুল্লাহ মনির তার তিন সহোদর ও স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কিছু সন্ত্রাসীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন। মনিরের সহোদর ফারুক হোসেন স্থানীয় এক জনপ্রিয় আলেম মৃত সানাউল্লাহকে এসিড নিক্ষেপের দায়ে কর্তৃক যাবজ্জীবন সাদা প্রাপ্ত হয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আরেকজন দুলাল হোসেন ঢাকায় যুবলীগ নেতা নিখিলের সাথে থেকে নানান সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। সাজানো ঘটনা ও মিথ্যা মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ভিকটিমের চাচা বেলাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কিছুই বলার নেই যা হওয়ার আদালতে হবে। .
.
এবিষয়ে কথিত প্রফেসর সিরাজ উল্যা মনির নিজেকে সুনামধন্য ওই সম্মানিত শিক্ষক দাবি করে বলেন, বিষয়টা মসজিদ কমিটি নিয়ে। সব মানুষ আমাকে চায় কিন্তু তাঁরা আমার বিরোধিতা করে, এটা আমার জন্য চরম লজ্জার। ইতিপূর্বেও এই তানভীর আমার গায়ে হাত তুলেছে আমাকে লাঞ্ছিত করেছে। আমার মায়ের সাথেও উচশৃঙ্খল আচরণ করেছে। এখন সে আমার ছেলের গায়ে হাত তুলেছে তাই আমি মামলা করেছি। পরিবারের অন্যদেরকে মামলা দেওয়ার বিষয়ে তিনি কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। এ সময় তিনি নিজেকে ভোরের আলোর সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন। .
.
এবিষয়ে ভুক্তভোগী স্কুল শিক্ষক খালেদ মোহাম্মদ আলী তানভীর বলেন, শুক্রবার মসজিদে কমিটি গঠন নিয়ে মুসল্লীদের দুই পক্ষের তর্ক-বিতর্ক হয়। আমি নামাজ পড়ে ঘরে চলে আসছি। কিন্তু শত্রুতার জের ধরে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখেন সেদিন এধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। আমি ন্যায় বিচার চাই। . .
ডে-নাইট-নিউজ /
আপনার মতামত লিখুন: